আবু মোরশেদ চৌধুরী:
আজ ১৯ আগষ্ট বিশ্ব মানবিকতা দিবস। ২০০৩ সালের ১৯ আগষ্ট বাগদাদে হোটেল “কেনেল” এ এক ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে ২২জন মানবিক সহায়তা কর্মী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি সার্জিও ভেরিয়া ডি মেলো। দূর্ঘটনার পাঁচ বছর পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সীদ্ধান্তে ১৯ আগষ্টকে World humanitarian day বা বিশ্ব মানবিকতা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে। জাতীয় সংঘ কতৃক ঘোষিত ২০২১ সালের বিশ্ব মানবিক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় “জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবেলার প্রতিযোগিতায় আমরা যেন কাউকে পেছনে ফেলে না রাখি।”
অপরদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বাণীতে বলেন ” The Climate emergency is a race we are losing, but it is a race we can win”
বাংলাদেশের ন্যায় জাতিসংঘের কতৃক ঘোষিত এই প্রতিপাদ্য বিষয়ে নিয়ে আজ বিশ্বের সকল দেশে মানবিকতা দিবস ২০২১ পালিত হচ্ছে।
সরকার কক্সবাজারে জলবায়ু পরিবর্তনে শিকার হাজার হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু গৃহহীন লোকজনের জন্য টেকসই বাসস্থান নির্মান এবং হস্তান্তরের পাশাপাশি দশ লাখেরও অধিক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে বিশ্বে এক অসাধারণ নজির স্থাপনা করেছে। এই মানবিক কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এক মানবিক সহযোগিতা প্রদান করতে গিয়ে কক্সবাজারের মানুষকে নুতন করে পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার হতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিতে গিয়ে আমাদের হারাতে হলো হাজার বছরের ছয় হাজারেরও অধিক সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভুমি ,প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য, কার্বন সহিষ্ণু উদ্ভিদকুল আর বন সম্পদ নির্ভর জীবন-জীবিকা । আজকের যেই মানবিকতা দিবস ২০২১ এর প্রতিপাদ্য বিষয়ের সাথে বাংলাদেশের অবস্থান শতভাগ সামঞ্জস্।
এই দিনে বর্তমান সরকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মানবিক উদ্যোগ এবং প্রয়াসকে আমরা কতটুকু বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করে দেশকে মানবিক দেশ হিসেবে ব্র্যান্ডিং করতে সক্ষম হয়েছি?
ভালমন্দ / দোষগুণে মানুষ এবং তা চিরন্তন । একতরফা সমালোচনা করে শুধু ভুল গুলো তুলে ধরা আমাদের অনেকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং আত্মতৃপ্তির খোরাকে পরিনত হয়েছে! ব্যক্তি মানুষের বা রাষ্ট্রের ভাল দিক গুলো উপস্থাপন করতে আমরা কেমন জানি সংকীর্ণতা ফোবিয়ায় ভোগী। আজকের যেই মানবিকতা দিবস ২০২১, এটিকে ঘিরে আমরা কিন্তু স্থানীয় এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এটা বড় ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে নিজেদের এবং রাষ্ট্রকে উপস্থাপন করতে পারতম। বিশ্বের অনেক দেশ মানবিকতার মুখোশে নিজেদের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্বার্থের এজেন্ডা নিয়ে এগিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের মত উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশ গুলো নানান সীমাবদ্ধতার মাঝেও কিন্তু মানবিক সাড়া দানে যা কিছু করে শতভাগ মানবিক বিবেচনায় করে থাকে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে একটা অনন্য দৃষ্টান্ত। তাই যারা রাষ্ট্র যন্ত্র এবং রাজনৈতিক কমিটমেন্ট এর সাথে সম্পৃক্ত উনাদের এই সমস্ত বিষয় , বৈশ্বিক ব্যপার গুলোর সুযোগ নিয়ে দেশের অর্জনকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের অবস্থান জানানোর মাধ্যমে সচেতন করা সময়ের দাবি।

আবু মোরশেদ চৌধুরী
সভাপতি, কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রী।